বিহারে আইটিআই: দক্ষতা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের সেতুবন্ধন

ভূমিকা

শিল্প প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (ITI) শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের মধ্যে সেতু হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিহারে, আইটিআই গুলি যুবসমাজকে পেশাভিত্তিক শিক্ষা ও দক্ষতা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করে তাদের ক্ষমতায়িত করছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি দক্ষ কর্মশক্তি গড়ে তুলছে, যা রাজ্যের শিল্পোন্নয়ন এবং অর্থনীতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

আইটিআই কী?

Industrial Training Institutes (ITIs) হল সরকারি ও বেসরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যেখানে বিভিন্ন ট্রেডে প্রযুক্তিগত শিক্ষা প্রদান করা হয়। সাধারণত ৮ম, ১০ম অথবা ১২শ শ্রেণি পাশের পর শিক্ষার্থীরা এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভর্তি হয়ে হাতে-কলমে কাজ শেখে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ পায়।

বিহারে আইটিআই-এর বিকাশ

বিহার ভারতের অন্যতম জনবহুল রাজ্য এবং এখানে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা ব্যাপক। এই চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার বিহারের বিভিন্ন স্থানে বিস্তৃত আইটিআই নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। বর্তমানে বিহারে ৩,০০০-এরও বেশি আইটিআই রয়েছে, যার মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত। এই আইটিআইগুলোতে ৮০টিরও বেশি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। জনপ্রিয় ট্রেডের মধ্যে রয়েছে:

✅ ইলেকট্রিশিয়ান
✅ ফিটার
✅ ওয়েল্ডার
✅ মেকানিক
✅ প্লাম্বার
✅ কম্পিউটার অপারেটর
✅ আরও অনেক কিছু।

কোর্স ও ট্রেডসমূহ

বিহারের আইটিআইগুলিতে বিভিন্ন শিল্প খাতের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

✔️ ইলেকট্রিশিয়ান (Electrician)
✔️ ফিটার (Fitter)
✔️ ওয়েল্ডার (Welder)
✔️ প্লাম্বার (Plumber)
✔️ রেফ্রিজারেশন ও এয়ার কন্ডিশনিং মেকানিক
✔️ কম্পিউটার অপারেটর ও প্রোগ্রামিং অ্যাসিস্ট্যান্ট (COPA)
✔️ ড্রাফটসম্যান (সিভিল/মেকানিক্যাল)
✔️ ওয়্যারম্যান (Wireman)

এই কোর্সগুলির সময়কাল সাধারণত ৬ মাস থেকে ২ বছর, ট্রেডের উপর নির্ভর করে।

ভর্তির যোগ্যতা

বিহারে আইটিআই-তে ভর্তি হতে সাধারণত যে যোগ্যতা লাগে তা হলো:

🔹 ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা: ৮ম, ১০ম অথবা ১২শ শ্রেণি পাশ।
🔹 বয়সসীমা: কমপক্ষে ১৪ বছর।
🔹 ভর্তি প্রক্রিয়া: সাধারণত মেধা তালিকা বা প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে।

বিহারে আইটিআই-এর গুরুত্ব

✅ দক্ষতা উন্নয়ন: ব্যবহারিক দক্ষতার উপর জোর দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাজের জন্য প্রস্তুত করা।
✅ কর্মসংস্থানের সুযোগ: সরকার ও বেসরকারি খাতে চাকরি। অনেকেই নিজেদের ব্যবসাও শুরু করেন।
✅ সাশ্রয়ী শিক্ষা: অন্যান্য পেশাগত কোর্সের তুলনায় কম খরচে প্রশিক্ষণের সুযোগ।
✅ শিল্পের জন্য দক্ষ কর্মী যোগান: আইটিআই পাস করা কর্মীরা রাজ্যের বিভিন্ন শিল্পের কর্মী ঘাটতি পূরণ করে।

সরকারি উদ্যোগ

বিহার সরকার ও কৌশল উন্নয়ন ও উদ্যোগ মন্ত্রক (MSDE) যৌথভাবে আইটিআইকে উন্নত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে:

🔸 প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা (PMKVY)-র মাধ্যমে স্কিল ডেভেলপমেন্ট।
🔸 ডিজিটাল আইটিআই, যেখানে অনলাইন প্রশিক্ষণের সুযোগ।
🔸 প্লেসমেন্ট সেল, চাকরির সুযোগ তৈরি করতে সহায়ক।
🔸 বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি, অ্যাপ্রেন্টিসশিপ এবং হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের জন্য।

আইটিআই শেষ করার পর কর্মসংস্থানের সুযোগ

✅ সরকারি চাকরি: ভারতীয় রেলওয়ে, পিডব্লিউডি, বিদ্যুৎ বিভাগে।
✅ বেসরকারি খাতে চাকরি: উৎপাদন, নির্মাণ, তথ্য প্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে।
✅ অ্যাপ্রেন্টিসশিপ: বড় বড় কোম্পানিতে প্রশিক্ষণ।
✅ নিজস্ব ব্যবসা শুরু: ইলেকট্রিক রিপেয়ার, ওয়েল্ডিং, প্লাম্বিং ইত্যাদিতে।
✅ উচ্চশিক্ষা: ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তির সুযোগ।

উপসংহার

বিহারের আইটিআই হাজার হাজার যুবকের জন্য কর্মসংস্থান এবং স্বনির্ভরতার পথ খুলে দিয়েছে। হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ এবং ব্যবহারিক দক্ষতার উপর গুরুত্ব দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলি দক্ষ শ্রমিক তৈরি করছে, যারা রাজ্যের শিল্পোন্নয়ন ও অর্থনীতির বিকাশে বড় ভূমিকা রাখছে। আপনি যদি স্কুল পাশ করার পরে ক্যারিয়ার গড়তে চান, বা কোনো নির্দিষ্ট ট্রেডে দক্ষতা অর্জন করতে চান, তাহলে বিহারের আইটিআই হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ।

✅ আরও তথ্য বা নির্দিষ্ট কোনো আইটিআই-এর তালিকা পেতে চাইলে জানাতে পারেন!
✅ আপনার এলাকার কোনো নির্দিষ্ট ট্রেড বা কোর্স খুঁজতে সাহায্য লাগলে বলবেন!