অসমে আইটিআই: দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের পথপ্রদর্শক

ভূমিকা

ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (ITI) শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের মধ্যবর্তী ব্যবধান দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অসমে, আইটিআইগুলো পেশাভিত্তিক শিক্ষা ও দক্ষতা-ভিত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুব সমাজকে ক্ষমতায়ন করছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ কর্মশক্তি গড়ে তুলছে, যা রাজ্যের শিল্পোন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।


আইটিআই কী?

Industrial Training Institutes (ITIs) হল সরকারি ও বেসরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যেখানে বিভিন্ন ট্রেডে প্রযুক্তিগত শিক্ষা দেওয়া হয়। ছাত্রছাত্রীরা ৮ম, ১০ম বা ১২শ শ্রেণি পাস করার পর এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে হাতে-কলমে দক্ষতা অর্জন করে, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরি বা ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করে।


অসমে আইটিআই-এর বিকাশ

অসম ভারতের একটি জনবহুল রাজ্য, যেখানে দক্ষ শ্রমশক্তির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এই চাহিদা পূরণ করতে অসম সরকার রাজ্যজুড়ে বিস্তৃত আইটিআই নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। বর্তমানে অসমে ৩,০০০-এরও বেশি আইটিআই রয়েছে, যার মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ৮০টিরও বেশি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যেমন:

✅ ইলেকট্রিশিয়ান
✅ ফিটার
✅ ওয়েল্ডার
✅ মেকানিক
✅ প্লাম্বার
✅ কম্পিউটার অপারেটর
✅ আরও অনেক ট্রেড।


কোর্স এবং ট্রেডসমূহ

অসমের আইটিআইগুলো বিভিন্ন শিল্প খাতে প্রশিক্ষণ প্রদান করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিল্পসমূহ হল মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিক্স, নির্মাণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি। কিছু জনপ্রিয় ট্রেডের মধ্যে রয়েছে:

✔️ ইলেকট্রিশিয়ান
✔️ ফিটার
✔️ ওয়েল্ডার
✔️ প্লাম্বার
✔️ রেফ্রিজারেশন ও এয়ার কন্ডিশনিং মেকানিক
✔️ কম্পিউটার অপারেটর ও প্রোগ্রামিং অ্যাসিস্ট্যান্ট (COPA)
✔️ ড্রাফটসম্যান (সিভিল/মেকানিক্যাল)
✔️ ওয়্যারম্যান

প্রশিক্ষণের মেয়াদ সাধারণত ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে, নির্ভর করে ট্রেডের উপর।


ভর্তির যোগ্যতা

আইটিআইতে ভর্তি হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কিছু সাধারণ যোগ্যতা থাকতে হয়:

🔸 ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা: ৮ম, ১০ম অথবা ১২শ পাস।
🔸 বয়সসীমা: ন্যূনতম ১৪ বছর।
🔸 ভর্তি প্রক্রিয়া: মেধা তালিকা বা প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে।


অসমে আইটিআই-এর গুরুত্ব

দক্ষতা উন্নয়ন: হাতে-কলমে শেখানো হয়, যার ফলে শিক্ষার্থীরা সরাসরি শিল্পে কাজ করতে সক্ষম হয়।
কর্মসংস্থানের সুযোগ: সরকারি ও বেসরকারি দুই ক্ষেত্রেই চাকরির সুযোগ থাকে।
সাশ্রয়ী শিক্ষা: পেশাগত কোর্সের তুলনায় খরচ অনেক কম।
শিল্পের জন্য দক্ষ কর্মী যোগান: অসমের বিভিন্ন শিল্পে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা মেটানো হয়।


সরকারি উদ্যোগ

অসম সরকার এবং Ministry of Skill Development and Entrepreneurship (MSDE)-এর সহায়তায় আইটিআই উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি চালু হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

🔹 প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা (PMKVY)
🔹 ডিজিটাল আইটিআই-র মাধ্যমে অনলাইন শিক্ষার সুবিধা
🔹 প্লেসমেন্ট সেল, শিক্ষার্থীদের চাকরি পেতে সহায়তা করে
🔹 বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা, যাতে শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপ ও হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিতে পারে


আইটিআই শেষ করার পর ক্যারিয়ারের সুযোগ

সরকারি চাকরি: ভারতীয় রেলওয়ে, PWD, বিদ্যুৎ বিভাগ ইত্যাদিতে কাজের সুযোগ।
বেসরকারি চাকরি: উৎপাদন, নির্মাণ, আইটি খাতে চাকরি পাওয়া যায়।
অ্যাপ্রেন্টিসশিপ: বিভিন্ন বড় কোম্পানিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ।
নিজস্ব ব্যবসা শুরু: ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রিকাল রিপেয়ার, প্লাম্বিং ইত্যাদিতে।
উচ্চশিক্ষার সুযোগ: ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়।


উপসংহার

আইটিআই অসমে হাজার হাজার যুবকের কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরতার দিকপথ দেখাচ্ছে। হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ ও বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আইটিআই শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তোলে, যা রাজ্যের শিল্পোন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে আরও ত্বরান্বিত করছে। আপনি যদি স্কুল শেষ করে নতুন কেরিয়ার গড়ার সুযোগ খুঁজছেন, তাহলে অসমের আইটিআই-তে ভর্তি হওয়া আপনার জন্য সেরা সিদ্ধান্ত হতে পারে।


আরও তথ্য জানতে চান? নিকটবর্তী আইটিআই খুঁজে দিতে সাহায্য করব!
ভর্তি সংক্রান্ত নির্দেশিকা দরকার হলে জানাবেন!

Subscribe to অসমে আইটিআই