পশ্চিমবঙ্গে আইটিআই

পশ্চিমবঙ্গে আইটিআই: দক্ষতা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের একটি প্রবেশদ্বার

ভূমিকা

ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটস (আইটিআই) শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পশ্চিমবঙ্গে, আইটিআই প্রতিষ্ঠানগুলি পেশাগত শিক্ষা এবং দক্ষতা-ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে যুব সমাজকে ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি একটি দক্ষ কর্মশক্তি গড়ে তুলতে, শিল্পের বিকাশে সহায়তা করতে এবং রাজ্যের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

আইটিআই কী?

ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটস (আইটিআই) হলো সরকারি ও বেসরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যেখানে বিভিন্ন ট্রেডে প্রযুক্তিগত শিক্ষা প্রদান করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলি ৮ম, ১০ম বা ১২শ শ্রেণি পাশ করার পর শিক্ষার্থীদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তৈরি, যাতে তারা বিভিন্ন খাতে বাস্তবমুখী দক্ষতা অর্জন করে সহজে চাকরি পেতে সক্ষম হয়।

পশ্চিমবঙ্গে আইটিআই-এর বিকাশ

পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অন্যতম জনবহুল রাজ্য এবং এখানে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা অত্যন্ত বেশি। এই চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে, সরকার রাজ্য জুড়ে বিস্তৃত আইটিআই নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে ৩০০০-রও বেশি আইটিআই রয়েছে, যার মধ্যে সরকারি এবং বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠানই আছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি ৮০টিরও বেশি ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করে, যেমন ইলেকট্রিশিয়ান, ফিটার, ওয়েল্ডার, মেকানিক, প্লাম্বার, কম্পিউটার অপারেটর ইত্যাদি।

কোর্স ও ট্রেডসমূহ

পশ্চিমবঙ্গের আইটিআই গুলিতে যেসব কোর্স প্রদান করা হয় সেগুলি মূলত যন্ত্র প্রকৌশল, বৈদ্যুতিক, অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিক্স, নির্মাণ এবং তথ্য প্রযুক্তি খাতের সঙ্গে যুক্ত।
জনপ্রিয় কয়েকটি ট্রেডের মধ্যে রয়েছে—
✔️ ইলেকট্রিশিয়ান
✔️ ফিটার
✔️ ওয়েল্ডার
✔️ প্লাম্বার
✔️ রেফ্রিজারেশন ও এয়ার কন্ডিশনিং মেকানিক
✔️ কম্পিউটার অপারেটর ও প্রোগ্রামিং অ্যাসিস্ট্যান্ট (COPA)
✔️ ড্রাফটসম্যান (সিভিল/মেকানিক্যাল)
✔️ ওয়্যারম্যান

এই কোর্সগুলির সময়কাল সাধারণত ৬ মাস থেকে ২ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে, ট্রেড অনুযায়ী ভিন্নতা দেখা যায়।

যোগ্যতার মানদণ্ড

পশ্চিমবঙ্গে আইটিআই-তে ভর্তির জন্য যোগ্যতা ট্রেড অনুযায়ী আলাদা হলেও সাধারণত নিম্নলিখিত শর্তগুলি থাকে—
✔️ ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা: ৮ম, ১০ম অথবা ১২শ শ্রেণি পাশ।
✔️ বয়সসীমা: ন্যূনতম ১৪ বছর।
✔️ ভর্তি প্রক্রিয়া সাধারণত মেধা তালিকার ভিত্তিতে বা প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে হয়ে থাকে।

পশ্চিমবঙ্গে আইটিআই-এর গুরুত্ব

✅ দক্ষতা উন্নয়ন: আইটিআই-এ প্রধানত বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়, ফলে শিক্ষার্থীরা সরাসরি কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত হয়।
✅ কর্মসংস্থানের সুযোগ: আইটিআই পাশ করা শিক্ষার্থীরা সরকারি ও বেসরকারি খাতে সহজেই চাকরি পায়। অনেকে নিজের ব্যবসাও শুরু করে।
✅ সাশ্রয়ী শিক্ষা: অন্যান্য পেশাগত কোর্সের তুলনায় কম খরচে প্রযুক্তিগত শিক্ষা পাওয়া যায়।
✅ শিল্প খাতে অবদান: আইটিআই প্রশিক্ষিত কর্মীরা রাজ্যের বিভিন্ন শিল্পখাতে মানবসম্পদের চাহিদা পূরণ করে এবং শিল্পোন্নয়নে সহায়তা করে।

সরকারের উদ্যোগ

পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং Skill Development and Entrepreneurship (MSDE) মন্ত্রকের সহায়তায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে—
✔️ প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা (PMKVY)-এর মতো দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প।
✔️ ডিজিটাল আইটিআই, অনলাইন শেখার সুবিধা।
✔️ প্লেসমেন্ট সেল, প্রশিক্ষণ শেষে চাকরির সুযোগ করে দেয়।
✔️ বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে চুক্তি, যাতে শিক্ষার্থীরা অ্যাপ্রেন্টিসশিপ ও হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের সুযোগ পায়।

আইটিআই কোর্সের পর কর্মসংস্থানের সুযোগ

আইটিআই সম্পূর্ণ করার পরে শিক্ষার্থীরা—
✔️ ভারতীয় রেলওয়ে, PWD, বিদ্যুৎ বোর্ডের মতো সরকারি দপ্তরে চাকরির সুযোগ পায়।
✔️ বেসরকারি খাতের উৎপাদন, নির্মাণ, তথ্য প্রযুক্তি ইত্যাদি খাতে চাকরি পেতে পারে।
✔️ বৃহৎ কোম্পানিতে অ্যাপ্রেন্টিসশিপের আবেদন করতে পারে।
✔️ নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারে, যেমন: ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রিক রিপেয়ার, প্লাম্বিং ইত্যাদি।
✔️ উচ্চতর পড়াশোনার সুযোগ পায়, যেমন: ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং।

উপসংহার

পশ্চিমবঙ্গের আইটিআই হাজার হাজার যুবকের কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরতার পথ খুলে দিয়েছে। বাস্তবমুখী দক্ষতা এবং হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়ে আইটিআই প্রতিষ্ঠানগুলি দক্ষ কর্মশক্তি গড়ে তুলছে, যা রাজ্যের শিল্পোন্নয়নের চালিকা শক্তি হয়ে উঠছে। আপনি যদি স্কুল শেষ করে একটি পেশাগত ক্যারিয়ার শুরু করতে চান কিংবা কোনো ট্রেড শিখতে চান, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের আইটিআই-তে রয়েছে অসংখ্য সুযোগ।